ত্রিপুরাপ্রত্যয় প্রতিনিধি, ধর্মনগরঃ ধর্মনগর থেকে আগরতলা পর্যন্ত ২০৮ নং বিকল্প জাতীয় সড়ক নির্মাণ নিয়ে বছরের পর বছর রাজ্য সরকারের উদাসীনতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠলো উত্তর জেলা। সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয় কদমতলা ব্লকের জেরজেরি চেকপোস্ট এলাকায়। কর্মসূচির ফলে জাতীয় সড়কের উভয় প্রান্তে শত শত যানবাহন আটকে পড়ে, কার্যত থমকে যায় জনজীবন।অবরোধ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন সিপিআই(এম) ধর্মনগর মহকুমা কমিটির নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন রাজেন্দ্র রিয়াং, রতন রায়, অভিজিৎ দে, দূর্গেশ রায়, শৈলেন্দ্র চন্দ্র নাথ, ইসলাম উদ্দিন, বিজিতা নাথ ও অজিত দাসসহ একাধিক স্থানীয় নেতা-কর্মী। এদিন সকাল থেকেই এলাকায় সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভিড় জমে যায়। অবরোধ শেষে রাস্তার পাশেই এক সভা অনুষ্ঠিত হয়,বাম নেতাদের অভিযোগ, “বিগত কয়েক বছর ধরে বিকল্প জাতীয় সড়ক নির্মাণের নামে সরকার শুধুই প্রতিশ্রুতির বুলি আওড়াচ্ছে। বাস্তবে কাজের নামে চলছে দুর্নীতি, গাফিলতি ও লুটপাট।”দুর্ঘটনা, দুর্ভোগ আর অবহেলা বক্তারা জানান, এই বিকল্প জাতীয় সড়ক ধর্মনগরসহ উত্তর জেলার মানুষের যাতায়াতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রাস্তার কাজ শুরু না হওয়ায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য রাজেন্দ্র রিয়াং ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন “মানুষের প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে সরকার। প্রতিদিন স্কুল- কলেজগামী ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীরা প্রাণ হাতে করে চলাফেরা করছে।” অবরোধ মঞ্চ থেকে অভিযোগ তোলা হয়— জনগণের করের টাকা ঠিকাদার ও শাসক দলের প্রভাবশালীরা ভাগ করে নিচ্ছে। অথচ সাধারণ মানুষকে দেওয়া হচ্ছে শুধু প্রতিশ্রুতি আর ফাঁপা বুলি। এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কৃষকরা উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি এম্বুলেন্স ও জরুরি পরিষেবাও বারবার বাধার মুখে পড়ছে।সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র হুঁশিয়ারি দিয়ে অবরোধে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাম নেতারা বলেন, “মানুষ আর সহ্য করবে না। রাজ্য সরকার জনস্বার্থবিরোধী নীতি নিয়ে চলছে। মানুষের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তার প্রতি এদের সামান্যতম দায়িত্ববোধও নেই। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছে মানুষ।” তাঁরা আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি অবিলম্বে বিকল্প জাতীয় সড়কের কাজ শুরু না হয়, তবে উত্তর জেলা জুড়ে আরও বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এবার শুধু অবরোধ নয়, প্রয়োজনে লাগাতার আন্দোলনের পথে হাঁটতে পিছপা হবে না বামপন্থীরা।” এই অবরোধে ব্যাপক জনসমর্থনে এদিনের অবরোধ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া লক্ষ্য করা যায়। সকাল থেকেই আশপাশের গ্রামাঞ্চল থেকে বহু মানুষ যোগ দেন অবরোধস্থলে। গাড়ি আটকে পড়া যাত্রীরাও ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানান, তারা আন্দোলনের পাশে আছেন। তাদের কথায়, “আমাদের প্রতিদিনের দুর্ভোগ সরকার বুঝতে চায় না। তাই এই আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত।”অবরোধ ঘিরে কোনো অশান্তি না ঘটলেও এলাকায় ব্যাপক পুলিশবাহিনী মোতায়েন ছিল। পুলিশ প্রশাসন নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারিত সময় শেষে শান্তিপূর্ণ ভাবে অবরোধ তুলে নেয়।উত্তর জেলা জুড়ে বামেদের এদিনের কর্মসূচি এক নতুন বার্তা ছড়িয়ে দিল— জনগণের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। বিকল্প জাতীয় সড়ক নির্মাণে সরকারের গাফিলতি আর দুর্নীতি নিয়ে ক্ষোভ সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, এই আন্দোলন কেবল শুরু, মানুষ এবার নেমেছে নিজেদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে।