আগরতলা: আগরতলা পুর নিগম এলাকার দুর্গাপূজা উদ্যোক্তাদের নিয়ে আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় । আগরতলা পুর নিগমের উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় বিভিন্ন ক্লাবের কর্মকর্তা বাজার ও পূজা কমিটির প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন । মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাক্তার মানিক সাহা । বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন দূর্গাপূজার উৎসব । একে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে ভাতৃত্ববোধ ও সংহতির সৃষ্টি হয় । অহেতুক চাঁদার নামে এই উৎসবকে কালিমালিপ্ত করা উচিত নয় । যদি কোন ক্লাব বা পূজা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চাঁদা সংক্রান্ত অভিযোগ আসে তাহলে আইন তার নিজস্ব পথে চলবে । মুখ্যমন্ত্রী বলেন সরকার আত্ননির্ভর ত্রিপুরা গড়তে প্রথম থেকেই সচেষ্ট রয়েছে । কিন্তু বড় বড় বাজেটের পূজা গুলির ক্ষেত্রে দেখা যায় মূর্তি প্যান্ডেল আলোকসজ্জা ইত্যাদির জন্য রাজ্যের বাইরে শিল্পীদের সুযোগ করে দেওয়া হয় । এই ক্ষেত্রে রাজ্যের শিল্পী ও শ্রমিকরা কাজ করতে পারলে রাজ্যের অর্থ রাজ্যে থেকে যাবে । এই বিষয়ে পূজা উদ্যোক্তাদের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ জানান । সভায় মুখ্যমন্ত্রী মতবিনিময় সভায় যে সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তা নিয়ে নিজ নিজ ক্লাবে আলোচনা করার জন্য উপস্থিত পূজা উদ্যোক্তাদের বলেন । তিনি আরো বলেন বিগত সময় গুলিতে পূজা গুলি কে কেন্দ্র করে উশৃংখলতা চরমে ছিল । বর্তমান সরকারের সময় সুষ্ঠুভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ফলে সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে । এবারের পূজায় নেশাজাতীয় সামগ্রী সম্পূর্ণরূপে বর্জন করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানান । পূজার সময় অনুমোদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক রাখা ক্লাব গুলির মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার জন্য সকল ক্লাবগুলোকে একসাথে কাজ করতে মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ জানান । সভায় আলোচনায় তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী উপস্থিত সকল ক্লাব কর্তৃপক্ষ দের নিকট সরকারিভাবে প্রথমবারের মতো বিজয় দশমী উপলক্ষে আয়োজিত মায়ের গমন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান । তিনি জানান প্রাথমিকভাবে 7 অক্টোবর এই অনুষ্ঠান করা হবে । এ উপলক্ষে পোস্ট অফিস চৌমুহনী থেকে প্যারাডাইস চৌমুহনী মেলারমাঠ হয়ে দশমী ঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লাবের দুর্গা প্রতিমা গুলিকে নিয়ে বর্ণাঢ্য রেলি করে দশমী করা হবে l সভায় আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে পুর নিগম কর্তিক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন l তিনি জানান ক্লাব কর্তৃপক্ষের পূজা করার অনুমোদন নেয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় এজন্য জোনাল অফিস গুলিতে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে । এবছর দর্শনার্থীদের নিকট নতুন আগরতলা তুলে ধরার জন্য কাজ করছে পুরনিগম l শহরের সৌন্দর্যায়নের প্রায় দুই কোটি টাকা আলাদা প্যাকেজ হাতে নেওয়া হয়েছে l পূজা উপলক্ষে 6 টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা কে তিরঙ্গা আলোকসজ্জায় সাজানো রাস্তা মেরামত দশমী ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জনের স্থানের আয়তন বাড়ানো ও স্থায়ী ফ্লাড লাইটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে । এছাড়াও দশমিক ঘাটে বিসর্জন জন্য থাকবে ট্রলি ট্রেন ইত্যাদি । মধ্যরাত্রির মধ্যে প্রতিমা নিরঞ্জন কর্মসূচি সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হবে । সভায় ডিআইজি জি কে রাও জানান এবছর এখন পর্যন্ত পশ্চিম ত্রিপুরা 904 টি পূজা করার আবেদন পত্র জমা পড়েছে । সারা রাজ্যে এই সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার । আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় আরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ছাড়াও প্রায় দেড় হাজার টিএসআর স্কাউটস অ্যান্ড গাইডস এনসিসির সদস্যরা থাকবেন l সন্ধ্যা 5 টা থেকে রাত্রি বারোটা পর্যন্ত থাকবে নো এন্ট্রি l এজন্য আগরতলা শহরে ঢোকার মুখে থাকবে 10 টি ড্রপ গেইট । সভায় এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন মুখ্য সচিব জে কে সিনহা পুলিশ মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন বিদ্যুৎ দপ্তরের সচিব বৃজেশ পান্ডে মিউনিসিপাল কমিশনার তথা পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন ,ক্লাব ফোরামের সভাপতি প্রণব সরকার । সভায় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি মেয়র মনিকা দাস দত্ত, এসপি শংকর দেবনাথ আগরতলা পুর নিগমের জোনাল চেয়ারম্যানগণ সহ পুরপরিষদগন । আজকের মত বিনিময় সভায় জুয়েলস এসোসিয়েশন, রামনগর স্পোর্টিং ক্লাব, জয়নগর যে পিসি শান্তিকামী সংঘ, শ্রী অরবিন্দ সংঘের প্রতিনিধিগণ আলোচনায় অংশ নেন ।